Tuesday, May 29, 2012

পুলিশের পিটুনির পরে মরে যাওয়া শিক্ষকের স্মারকলিপি

মানুষের জয় হোক, ন্যায় হোক আর...

পুলিশের পিটুনির পরে মরে যাওয়া শিক্ষকের স্মারকলিপি<br><br>মানুষের জয় হোক, ন্যায় হোক আর...: পুলিশের পিটুনির পরে মরে যাওয়া শিক্ষকের স্মারকলিপি

মানুষের জয় হোক, ন্যায় হোক আর শুভ হোক।
আমি এক শিক্ষক, অতিশয় দরিদ্র লোক।

চিরকাল শিখিয়েছি শুধু হয় সত্যের জয়
মানবের কাছে জানি দানবেরা মানে পরাজয়।
শিখিয়েছি গুরুজনে চিরকাল দিতে সম্মান
শিখিয়েছি মানবতা নম্রতা মমতার গান।
মানবজন্ম বৃথা যদি তার নাহি থাকে দান—
শিখিয়েছি দেশ-মাটি-মানুষের কিসে কল্যাণ।

দারিদ্র্য আমাদের চেহারায় এঁকে দেয় ছাপ
পেশাটা মহান তবে এ পেশায় আসাটাও পাপ!
তাই তো পাপের বোঝা আমাদের কাঁধে চেপে থাকে
নীতি আর আদর্শ আমাদের অনাহারে রাখে।

আমাদের পোশাকেও দারিদ্র্য উঁকি দিয়ে যায়
ছেঁড়া জুতো-স্যান্ডেলে দারিদ্র্য চেপে রাখা দায়!
স্মার্ট নই, বোকাসোকা, ভীতু খুব, শক্তিও কম
চিৎকার করব যে সে সাহস নাই একদম।

চুপচাপ বেঁচে থাকি, চাওয়া-পাওয়া খুব বেশি নাই
মানুষ গড়ার কাজ। মাস শেষে সামান্য পাই।
অভাবের দৈত্যটা গরিবের পেটে মারে ঘাঁই।
কেউ খোঁজ নেয় না তো তিন বেলা খাই কি না খাই!
এক বেলা খেতে পাই! উপোসের আছে অভ্যেস।
মানুষের ভালো হোক ভালো থাক এই প্রিয় দেশ।

প্রাইমারি শিক্ষক কম দামি খাটো হওয়া লাগে
সবার খাওয়ার পরে ছিটেফোঁটা আমাদের ভাগে!
যুগে যুগে কালে কালে আমরাই অভাবের বলি।
ভাবলাম আর কত! এইবার কিছু কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমাদের কোনো গতি নাই
জায়গা তো একটাই, ভাবলাম সেখানেই যাই।
স্মারকপত্র লিখে ‘হাসিনা’র কাছে দিয়ে আসি
বলে আসি—মা জননী, তোমাকে যে কত ভালোবাসি!
বিনিময়ে আমরাও সামান্য ভালোবাসা চাই
তা না হলে এ জীবনে বাঁচবার কোনো আশা নাই।

অআকখ চিনিয়েছি এবিসিডি শিখিয়েছি যাঁরা
অবজ্ঞা অবহেলা অনাদর কেন পাবে তাঁরা!
বিনিময়ে কেন তাঁরা টেনে যাবে অভাবের ঘানি?
জবাব দেবে না কেউ জ্ঞানী আর সুশীলেরা জানি!
আমার মতোই কিছু শিক্ষক অভাগার দল
ঢাকা এসে জড়ো হই হাতে নিয়ে শেষ সম্বল।
শহীদ মিনারে এসে সব্বাই সমবেত হই
আমাদেরও দাবি আছে, আমরা আগন্তুক নই।

সামান্য কিছু দাবি মানবিক কিছু কথা লিখে
যাত্রাটা শুরু হলো পিএমের অফিসের দিকে।
শান্তিপূর্ণ ছিল আমাদের সেই সমাবেশ
হইচই ভাঙচুর ছিল নাকো হিংসার লেশ।
আচমকা পুলিশের তাণ্ডবে কামানের জল
পথেই ছিটকে পড়ে অনাহারী দেহ দুর্বল!
পুলিশের ছেলেগুলো আমাদেরই প্রিয় সন্তান
শিক্ষক পিতাসম! তাঁহাকেই করে অপমান!
পুলিশের পিটুনিতে শিক্ষক কাঁদে লজ্জায়
জীর্ণশীর্ণ দেহ রাজপথে গড়াগড়ি খায়!

নির্দয় লাঠিপেটা ভাঙাচোরা শরীরে কি সয়?
জখম আহত গায়ে রক্তের লাল ধারা বয়!
জামার কলার টেনে ঘাড় ধরে টানাহেঁচড়ায়
আমাদের অপমানে রাষ্ট্রের কী-ই-বা আসে যায়!

গরম কামানজল লাঠিপেটা সইতে না পেরে
অপমানে জর্জর অবশেষে গেছি আমি হেরে।
সামান্য শিক্ষক আজিজুর মরে গেছি, হায়—
লিখিত এ অভিযোগ পোস্ট করি কোন ঠিকানায়!
প্রধানমন্ত্রী, মা গো, তোমাকেই চিঠি লিখিলাম
একদিন আমরাই তোমাদের গুরু তো ছিলাম!

আমাদের ছাত্ররা আছে কত বড় বড় পদে।
কেহই তো আসিলি না স্যারদের ঘোর এ বিপদে!
তোদেরকে পিটিয়েছি। বকাঝকা করেছি যে কত!
মানুষ হবি রে তোরা একদিন মানুষের মতো।
মানুষ হবি না তোরা? পড়া কেন রেডি হয় নাই?
বেত দিয়ে পিটিয়েছি, মনে করে আজও ব্যথা পাই।
আমাদের ছাত্ররা কেউ কেউ আজকে পুলিশ!
মানুষ হলি না তবে! গুরুদের গায়ে হাত দিস!

ক্ষমা করো ঈশ্বর আল্লাহ ও গড ভগবান
ছেলেগুলো নাবালক নালায়েক অবুঝ নাদান।
অভিশাপ দিচ্ছি না, প্রার্থনা করি দুই হাতে—
আমাদের ছাত্ররা থাকে যেন দুধে আর ভাতে...

DIGITAL JUICE

No comments:

Post a Comment

Thank's!